RED STONE
Leatest stories:

শুক্রবার, ১৫ জানুয়ারী, ২০১৬

খুনের দায় (শেষ পর্ব)

লাঞ্চের পর একটানা সন্ধে পর্যন্ত ফাইল দেখে আজকের মত কাজ শেষ করল রানা। মনের মধ্যে খচ্‌ খচ্‌ করছে সেই দুপুর থেকে। সন্ধ্যা নামতে গিলটি মিয়া ও ক্যাভিন হাওয়ার্ডকে নিয়ে বের হলো ও। প্র মে নিউ ইয়র্ক টাইমসের অফিসে গিয়ে বন্ধুর সাহায্যে পুরনো কাগজ বের করে প্লেনক্রাশের নিউজটা মন দিয়ে পড়ল ও আগাগোড়া। পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়াদের মধ্যে ফিলিপ শেফার্সের নাম রয়েছে। যাত্রীদের প্রায় সবারই একটা করে পাসপোর্ট সাইজ ছবি ছাপা হয়েছে, তার নীচে বিস্তারিত রিপোর্ট। শেফার্সের ছবির নীচে লিখেছে: এয়ারলাইন্সের কর্মচারী হিসাবে নিখরচায় ফ্লাই করছিলেন ফিলিপ শেফার্স। প্যারিসে ছুটি কাটিয়ে ফিরে আসবার সময় জে.এফ.কে ইণ্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টের মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় আগুনে পুড়ে মারা যান তিনি। চেহারা সম্পূর্ণ বিকৃত হয়ে গিয়েছিল তাঁর-শনাক্ত করা গেছে সঙ্গের নাম খোদাই করা লাইটারটা দেখে। ওটা বিমান কোম্পানির তরফ থেকে বড়দিনের উপহার দেওয়া হয়েছিল তাঁকে।

মূল খবরের সঙ্গে আর একটা মর্মস্পর্শী সাইডস্টোরিও তুলে ধরা হয়েছে: তাঁর সঙ্গে তাঁর স্ত্রীরও প্যারিস যাওয়ার কথা ছিল। তিনি আমাদের প্রতিনিধিকে জানিয়েছেন, ‘ট্রান্স-আটলাণ্টিক এয়ারলাইন্সে আমার স্বামীর চাকরির পাঁচ বছর পূর্তি উপলক্ষে তার সঙ্গে প্যারিস থেকে ঘুরে আসার জন্যে আমাকেও ফ্রি টিকেট দেয়া হয়েছিল। আমার কোম্পানী ছুটি মঞ্জুরও করেছিল। কিন্তু আমার ইমিডিয়েট বস্‌ হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ায় সে-ছুটি বাতিল হয়ে যায়। এর ফলে আমি প্রাণে বেঁচে গেছি বটে, কিন্তু এ-বাঁচা অর্থহীন।’

পত্রিকা অফিস থেকেই টেলিফোনে নিউ ইয়র্ক পুলিশের ক্যাপটেন জোসেফ ক্রাউলিকে চাইল রানা। কর্তব্যরত অফিসার জানালেন, ক্রাউলির ডিউটি রাত দশটা থেকে। যদি তাঁর পক্ষে কোনও সাহায্য…

‘বেশ, দশটার পরেই ফোন করব,’ বলে রিসিভার নামিয়ে রাখল রানা।

পত্রিকা অফিস থেকে বেরিয়েই চলল ওরা কুইন্সভিল রেসিডেনশিয়াল এরিয়ার দিকে। যাওয়ার পথে ক্যাভিনকে জিজ্ঞেস করল রানা, ‘কীভাবে ওটা খুলে আনবে বলে ভাবছ?’

‘বাইরে থেকে একটা ফোন করব, সার, আগে,’ বলল তরুণ শিক্ষানবীশ। ‘যদি কেউ না ধরে, তা হলে বুঝতে হবে বাড়ি খালি। যন্ত্রটা খুলে আনতে আমার একমিনিটের বেশি লাগবে না, সার।’

‘হাঁ, এতক্‌খনে জায়গাটা লিরিবিলি হয়ে যাওয়ার কতা,’ বলল গিলটি মিয়া। ‘তবে ঢোঁকার আগে তোমার পিও ছ্যাঁকরা গাড়িটা ও-বাড়ির কাচ থেকে সরিয়ে লিলে ভাল হয়,’ পরামর্শ দিল সে, ‘তারপর নিচ্চিন্ত হবার লেগে হালকা দুটো টোকা দেবে দরজায়, সাড়া না পেলে তবেই গে ঢোঁকা।’

বাঁক ঘুরে পিজিয়ন লেনে ঢুকতে গিয়ে চমকাল রানা। সম্পূর্ণ বদলে গেছে এলাকার পরিবেশ। শেফার্সদের বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে একটা লরিসহ তিনটে জিপগাড়ি-রাস্তায় গিজগিজ করছে পুলিশ, এলাকার বেশ কিছু কৌতূহলী লোকও আছে তাদের সঙ্গে। ব্রেক করতে গিয়েও মত পরিবর্তন করল রানা। জটলার পাশ দিয়ে ধীর গতিতে এগিয়ে গেল সামনে।

‘এইবার?’ জিজ্ঞেস করল রানা।

ক্যাভিনকে পরামর্শ দিল গিলটি মিয়া। ‘আর কী! আজ আর হোলোনিকো। যাও, কেবিন ভায়া, লিয়ে এসো তোমার গাড়ি। আগে হুডটা তুলে যন্তোপাতি লাড়াচাড়া করবে, তারপর ইস্টাট দেবে। ওই জটলার কাচে গিয়ে জেনে আসবে কী হয়েচে, এত ভিড়-ভাড়াক্কা কীসের। বুজলে?’

আধঘণ্টা পর ফিরে এল ক্যাভিন, একবার হর্ন বাজিয়ে পাশ কাটিয়ে চলে গেল আরও সামনে। রানার গাড়ি চলল ওর পিছু পিছু। কয়েকটা ব্লক পেরিয়ে তারপর থামল ওরা। নেমে এল ক্যাভিন।

‘সর্বনাশ হয়ে গেছে, সার!’ বলল ও। ‘রিটা শেফার্স আজ দুপুরে কোন্‌ এক হোটেলে গিয়ে খুন করেছে আমাদের স্ট্যানলিকে। একেবারে হাতে-নাতে ধরেছে ওকে পুলিশ পিস্তলসহ।’

‘আয়-হায়!’ বলল গিলটি মিয়া। ‘এত দৌড়ঝাঁপ করেও টাকাগুনো দোয়া গেল না ছোঁড়াটার হাতে!’

‘স্বীকারোক্তি দিয়েছে মেয়েটা?’ জিজ্ঞেস করল রানা।

‘না, সার। শুনলাম, খুনের পর থেকে একটা টুঁ শব্দও করেনি রিটা শেফার্স। গ্রেফতারের পর কোনও উকিলের সাহায্যও চায়নি। এক্কেবারে বোবা।’

মাথা ঝাঁকাল রানা। কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে রানা বলল, ‘চলো, অফিসে ফিরি।’

অফিসে পৌঁছে টেপ রেকর্ডারটা নিয়ে সবাই মিলে ঢুকল রানার কামরায়। টেবিলের উপর ওটা রেখে টেপটা রিওয়াইণ্ড করে নিয়ে চালিয়ে দিল গিলটি মিয়া শুরু থেকে। রিটা শেফার্সের মায়ের কল শোনা গেল প্র মে। মেয়েকে ধৈর্য ও সাহস না হারিয়ে বর্তমান বিপর্যয় মোকাবিলা করার ব্যাপারে অনেকক্ষণ ধরে নানানভাবে উপদেশ দিলেন মহিলা। তারপর শোনা গেল রবার্ট স্ট্যানলির অধৈর্য কণ্ঠ, ‘কী ব্যাপার! দশ মিনিট ধরে চেষ্টা করছি, লাইন পাচ্ছি না। কার সঙ্গে কথা বলছিলে?’

‘মা। ওহ্‌-হো! মাকে তো বলতেই ভুলে গেছি, আগামী কয়েকটা দিন থাকছি না এখানে।’

‘পরে ফোন করে জানিয়ে দিলেই হবে। একটা ব্যাগে তোমার জিনিসপত্র গুছিয়ে নাও, তবে এখুনি বেরিয়ে পোড়ো না, আমি ফোন করলে তারপর। ক্লিপটনের লেলিয়ে দেয়া ত্যাড়া এক প্রাইভেট আই একটু আগে এসেছিল এখানে, ব্যাটা কী করে জানি খুঁজে বের করে ফেলেছে আমাকে। তাই এই হোটেল ছেড়ে এখনই সরে যেতে হচ্ছে।’

‘তোমার খোঁজ বের করল কেমন করে ওরা? ইশ্‌শ্‌! এসবের মধ্যে না জড়ালেই আমরা ভাল করতাম। ভীষণ ভয় লাগছে আমার, ফিল! এত টেনশন হচ্ছে যে…’

‘মাথা ঠাণ্ডা রাখো, ডারলিং। কিচ্ছু ভেবো না তো! ভয় পাওয়ার মত কিছুই ঘটেনি এখন পর্যন্ত, ভবিষ্যতেও ঘটবে না। উত্তরাধিকারের ব্যাপারে আমার কোনও আগ্রহ নেই জানিয়ে দিয়ে আমি ভাগিয়ে দিয়েছি ব্যাটাকে। আরেকখানে সরে গিয়েই তোমাকে ফোন দেব। সাহস হারিয়ো না, নিজেকে শান্ত রাখো, লক্ষ্মী। বড়লোক হয়ে যাচ্ছি আমরা শীঘ্রি।’

এরপরের কলটা কতক্ষণ পর এল তা বোঝা গেল না, কারণ টেলিফোনের কথা শেষ হয়ে যেতেই টেপ রেকর্ডার বন্ধ ছিল। আবার সেই একই লোকের গলা শোনা গেল। বলছে, ‘সরে এসেছি, রিটা। ম্যানহাটনের ছোট, অখ্যাত, পুরোনো-তবে পরিষ্কার-পরিচ্ছনড়ব একটা হোটেলে; নাম মারলিন। দূর থেকেই একটা মাছের ছবি দেখতে পাবে। ডেস্কে বলে রাখব আমি, তুমি সোজা দোতলার একশ’ তিন নম্বর কামরায় চলে আসবে। এখানে কেউ খুঁজে পাবে না আমাদের। ব্যাগ গুছিয়ে তুমি তৈরি তো?’

‘হ্যাঁ।’

‘গুড! গাড়িটা গ্যারেজেই থাক, একটা ট্যাক্সি নিয়ে চলে এসো তুমি। এখন বাজে তিনটে। এখনই রওনা হলে পৌঁছে যাবে…’

গুলির শব্দে চমকে উঠল ওরা তিনজন। চাপা আওয়াজ-কিন্তু শব্দটা যে গুলির তাতে কোনও সন্দেহ নেই। পিস্তলের নলটা সম্ভবত লোকটার পিঠে ঠেকিয়ে টানা হয়েছে ট্রিগার।

‘উ-উ-হ!’

‘কী হলো! ফিল! ফিল! কীসের…’

খটাং শব্দে ক্রেডলে রাখল কেউ ফোনের রিসিভার। কেটে গেল কানেকশন। থেমে গেল টেপ।

প্র ম থেকে শেষ পর্যন্ত টেপটা আবার একবার শুনল রানা। ডুবে গেল গভীর চিন্তায়। ওকে চিন্তামগড়ব দেখে আলগোছে কামরা থেকে বেরিয়ে গেল গিলটি মিয়া তার সাগরেদকে নিয়ে। ঠিক দশটায় ফোন করে নিউ ইয়র্ক পুলিশের ক্যাপটেন জোসেফ ক্রাউলিকে সিটেই পেল রানা। বহুদিনের পরিচয়, রানার গলা পেয়ে উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠতে যাচ্ছিলেন ক্রাউলি; থমকে গেলেন ওর প্রশড়ব শুনে। জানতে চাইলেন, ‘কোন্‌ খুনটা মিস্টার রানা? মারলিন হোটেলের সেই রবার্ট স্ট্যানলি?’

‘হ্যাঁ। মৃত্যুর সঠিক সময়টা আমার জানা দরকার।’

‘ঠিক আছে, জেনে নিয়ে জানাচ্ছি। আপনি অফিসে না বাসায়?’

‘অফিসে।’

‘ঠিক আছে, জানাচ্ছি… ভাল কথা, এই কেসে কার ব্যাপারে আপনি ইণ্টারেস্টেড?’

‘প্র মত, রিটা শেফার্সের ব্যাপারে।’

‘খুনি মেয়েটাকে ডিফেণ্ড করবেন নাকি?’

‘চেষ্টা করব।’

‘কী বললেন? আপনি একটা খুনির হয়ে…’

‘খুনটা ও করেনি, ক্যাপটেন,’ শান্ত কণ্ঠে বলল রানা।

‘অ্যাঁ?’ মনে হলো খাবি খেলেন ক্যাপটেন ক্রাউলি। ‘বলেন কী, মিস্টার রানা? হাতে-নাতে ধরা হয়েছে ওকে! আপনি প্রমাণ করতে পারবেন যে, কাজটা ওর নয়?’

‘পারব। তবে প্রমাণটা নিশ্ছিদ্র করতে হলে আপনার সাহায্য লাগবে। মেয়েটি নিরপরাধ।’

থমকে গেলেন অফিসার। চুপ করে থাকলেন কিছুক্ষণ। রানার মন্তব্য ঘাবড়ে দিয়েছে তাঁকে। তা হলে কি ভুল মানুষকে ধরে এনেছেন?

‘সত্যিই যদি নিরপরাধ হয়,’ বললেন ক্যাপটেন, ‘একশোবার সাহায্য করব আমি। আর আসল খুনি যদি ধরা পড়ে, তা হলে তো সোনায় সোহাগা! আমি কি চলে আসব আপনার অফিসে?’ ‘আমিই আসছি আপনার কাছে। ইতিমধ্যে মৃত্যুর সঠিক সময়, আর আজ বিকেলে ওই হোটেলে ঠিক কী কী ঘটেছে জেনে নিয়ে তৈরি হয়ে থাকুন। বলা যায় না, আসল খুনি ধরা পড়তেও পারে! ইন দ্যাট কেস, দ্য হোল ক্রেডিট গোজ টু ইউ। ঠিক আছে?’

‘হানড্রেড পার্সেণ্ট!’ বললেন উল্লসিত ক্যাপটেন। ‘তা হলে চলে আসুন। রাখলাম।’

রাত দুটো দশে ফোন করল রানা লইয়ার অ্যাডাম ক্লিপটনের বাড়ির নম্বরে। রানার গলা শুনেই মহা খাপ্পা হয়ে উঠল আইনজীবী, ‘মিস্টার মাসুদ রানা, রাত কয়টা বাজে এখন-আপনার কি সময়জ্ঞান বলতে…’

‘দুটো বেজে এগারো,’ বলল রানা। ‘আপনার সঙ্গে এখনই একবার দেখা হওয়া দরকার আমার। আশাকরি রবার্ট স্ট্যানলির মৃত্যুর খবরটা জানা আছে আপনার?’

‘পুলিশ জানিয়েছে আমাকে। ওর লাশের পকেটে আমার লেখা চিঠি পাওয়া গেছিল। কিন্তু, রানা, এই রাতে আপনি…’

‘ক্লিপটন, আধঘণ্টা পর আপনাকে বাড়ির সামনে থেকে তুলে নেব আমি। তৈরি থাকবেন!’ বলেই লাইন কেটে দিল রানা।

ঠিক আধঘণ্টা পর গেটের সামনে এসে দাঁড়াল রানার গাড়ি। বড়সড় একটা লনের ওপাশে আঁধার হয়ে আছে উকিলের বাড়িটা। গেটের পাশে একটা পিলারের গায়ে হেলান দিয়ে অপেক্ষা করছিল ক্লিপটন, রানা থামতেই লম্বা পা ফেলে এগিয়ে এল। মাথায় বড়সড় একটা টুপি পরেছে, গায়ে গাঢ় রঙের দামি সুট, হাতে নরম পিগস্কিনের পাতলা গ্লাভস। টুপি আর গ্লাভস দেখে কিছুটা স্বস্তি বোধ করল রানা। পাশের সিটে উঠে বসতে বসতে জিজ্ঞেস করল লইয়ার, ‘আমার সঙ্গে যে দেখা করতে আসছেন একথা আর কে কে জানে, রানা?’

‘এত রাতে কোথায় পাব জানাবার লোক? তা ছাড়া জানাতে যাবই বা কেন?’ বলে গাড়ি ছেড়ে দিল রানা। ভাবছে, কখন জানি রেগে গিয়ে মেরে বসে লোকটা!

শহরতলির শেষ প্রান্তে পৌঁছে বাঁক নিয়ে একটা খোয়া বিছানো, সরু, নির্জন রাস্তায় ঢুকল রানার গাড়ি। কিছুদূর গিয়ে থেমে দাঁড়াল ঝোপঝাড়ের পাশে।

‘থামছেন যে?’ জানতে চাইল ক্লিপটন। ‘রাস্তার মাঝখানে থেমে দাঁড়াচ্ছেন কেন?’

আড়চোখে রানা দেখল, গ্লাভ পরা হাত দুটো কোলের উপর রাখা। একটু যেন বেশি শান্ত লাগছে লইয়ারকে। রানা ভাবল, ওর যদি কোথাও কোনও ভুল হয়ে থাকে, তা হলে বেইজ্জতির সীমা-পরিসীমা থাকবে না। ‘কথা আছে,’ বলল ও। ‘আপনি আমাদেরকে কাজ দিয়েছিলেন আপনার একজন মক্কেলকে খুঁজে দেবার জন্যে, যাকে হারিয়ে ফেলেছিলেন আপনি। আমরা আপনার সে-কাজটা করে দিয়েছি। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, ব্যাপারটা গড়িয়েছে গিয়ে খুনে। খুন হয়ে গেছে লোকটা!’

‘এই কথা বলতে এত রাতে আমাকে ঘুম থেকে তুলে এনেছেন, রানা? স্ট্যানলির সঙ্গে কোথাকার কোন্‌ মিসেস শেফার্সের গোপন প্রেম ছিল কি ছিল না, কেন সে স্ট্যানলিকে খুন করল; এসবের সঙ্গে আমার বা আপনার কী সম্পর্ক?’

‘আপনার কথা বলতে পারব না, ক্লিপটন, কিন্তু আমার সম্পর্ক আছে। আপনিই জড়িয়েছেন আমাকে। আমি আপনাকে বলেছি, কাজটা আমাদের লাইনে পড়ে না, আর কাউকে দিন-আপনি জোর করে চাপিয়েছেন ওটা রানা এজেন্সির ঘাড়ে; কেন তা আপনিই বলতে পারবেন। তখন জানতাম না, এভাবে খুন হয়ে যাবে আমাদের টার্গেট।’

‘আপনার বক্তব্য আমার কাছে পরিষ্কার হচ্ছে না, রানা। মনে হচ্ছে, মেয়েলোকটার হাতে স্ট্যানলির খুন হয়ে যাওয়াটা, আপনার ধারণা, আমি ঠেকাতে পারতাম!’

‘ক্লিপটন, ও এই খুনটা করেনি। ওর টেলিফোনে আমরা আড়ি পাতা যন্ত্র ফিট করেছিলাম। গতকাল সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত রিটা শেফার্স-এর ফোনে যে যা বলেছে, সব রেকর্ড করা আছে আমাদের টেপে। পেছনের সিটেই রাখা আছে রেকর্ডারটা, আপনি চাইলে আমি বাজিয়ে শোনাতে পারি। পুলিশের মেডিকেল এগজামিনার স্ট্যানলির মৃত্যুর সময় নির্ধারণ করেছেন: দুপুর তিনটে থেকে তিনটে দশ। আমার টেপ বলছে তিনটের সময় পিজিয়ন লেনের বাড়ি থেকে টেলিফোনে কথা বলছিল মিসেস শেফার্স স্ট্যানলির সঙ্গে, ঠিক সেই সময়েই গুলির শব্দ হয়। বুঝতে পারছেন? দশ মিনিটের মধ্যে ম্যানহাটনে পৌঁছানো সম্ভব ছিল না ওর পক্ষে। রিটা শেফার্সের অকাট্য অ্যালিবাই রয়েছে আমার টেপে।’ কয়েক সেকেণ্ড চুপ করে থাকল রানা। লক্ষ করল উকিলের হাত দুটো এখনও কোলের উপর রাখা। ‘গুলিটা করে আপনি মারলিন হোটেলের ওই কামরাতেই ওঁৎ পেতে অপেক্ষায় ছিলেন মেয়েটির জন্যে-জানতেন ও আসছে। মেয়েটি যখন পাগলের মত কামরায় ঢুকল, আপনি মাথায় বাড়ি মেরে অজ্ঞান করে পিস্তলটা ধরিয়ে দিলেন ওর হাতে। তারপর নিশ্চিন্তে বেরিয়ে গিয়ে পুলিশকে খবর দিলেন, একটা গুলির আওয়াজ শোনা গেছে মারলিন হোটেলের দোতলা থেকে। পুলিশও গিয়ে হাতে-নাতে ধরল ওকে। আপনার খুনের দায় চাপল রিটার কাঁধে।’ হাসল রানা, ‘এবার কিছুটা পরিষ্কার হয়েছে, জনাব?’

শান্ত ভঙ্গিতে বসে আছে লইয়ার। তার মনের ভিতর কী চলছে, সে-ই বলতে পারবে। পাশ ফিরে চেয়ে রয়েছে রানার মুখের দিকে। হয়তো বোঝার চেষ্টা করছে রানার আসল উদ্দেশ্যটা কী। আড়চোখে আর একবার ওর হাতের দিকে তাকাল রানা-অলস ভঙ্গিতে রাখা ও দুটো কোলের উপর। ‘উদ্ভট এক গল্প ফেঁদেছেন, রানা,’ বলল সে কিছুক্ষণ পর। ‘আপনার ইচ্ছেটা কী? কোনও ধরনের ব্ল্যাকমেইল?’

‘আমি কি আপনার কাছে টাকা-পয়সা চেয়েছি, ক্লিপটন?’ মাথা নাড়ল রানা। ‘আপনি জানেন, আমরা সবসময় ন্যায়ের পক্ষে কাজ করতে চেষ্টা করি। কোনও বদমাইশ অনর্থক কাউকে খুন করে সে-খুনের দায় অন্যায়ভাবে চাপিয়ে দেবে নিরীহ একটা মেয়ের ওপর, আর আমরা চুপচাপ সেটা চেয়ে চেয়ে দেখব-বাংলাদেশের মানুষ আমরা অতটা হৃদয়হীন, পাষণ্ড নই, ক্লিপটন। আমরা আপনাকে সাবধান করিনি একথা বলতে পারবেন না। তারপরেও কাজটা আপনি আমাদের ঘাড়ে চাপালেন। আপনার জানা উচিত ছিল, মক্কেল সম্পর্কে খোঁজ নেয়াও আমাদের কাজের মধ্যে পড়ে। যখন জানলাম, আপনি দেউলিয়া হওয়ার পথে, শেয়ার ব্যবসায় মার খেয়ে আর্থার হেনরির ফাণ্ড থেকে কয়েক দফায় মোটা অঙ্কের টাকা তুলে ফেঁসে গেছেন, তখন ভাল করে নজর দিতেই হলো। উত্তরাধিকারীরা টাকার জন্যে চাপ দিচ্ছে, দেবেই, টাকাটা ওদের। স্ট্যানলিকে পাওয়া যাচ্ছে না, একথা বলে বহুদিন ওদেরকে ঠেকিয়ে রেখেছিলেন এই ভেবে যে, আপনার কাকা মারা গেলে তার টাকা দিয়ে ফাণ্ড পূরণ করে দেবেন। কিন্তু কাকা আর মরে না। তারপর ওরা যখন নিজেরাই স্ট্যানলির খোঁজ বের করে দিল, তখন তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে বাধ্য হলেন আপনি অনিচ্ছাসত্ত্বেও। কিন্তু প্লেনটা ক্রাশ করল। ভাবলেন, বাঁচা গেল বুঝি; কিন্তু না, জানা গেল জীবিত তিনজনের মধ্যে রবার্ট স্ট্যানলিও একজন। ওকে গায়েব করে দিয়ে বা খুন করে বাঁটোয়ারা পিছিয়ে দেওয়ার প্লান ছিল আপনার আগে থেকেই। কিংবা হয়তো ভেবেছিলেন, ওর সঙ্গে একটা সমঝোতায় এসে ওকে দিয়ে কেস করাবেন আরও বেশি টাকার জন্যে-ফলে বাঁটোয়ারা পিছিয়ে যাবে আরও। মোট কথা, আপনার কাকার মৃত্যু পর্যন্ত যেমন করে হোক ঠেকিয়ে রাখতে হবে ভাগাভাগিটা। কিন্তু স্ট্যানলি হাসপাতাল থেকে গায়েব হয়ে যাওয়ায় চিন্তায় পড়ে গেলেন আপনি, ভাবলেন কবে না জানি হাজির হয়ে যায় ছোকরা টাকার জন্যে। আরও ভয়, কবে না জানি ও যোগাযোগ করে বসে অন্যান্য ভাগীদারদের সঙ্গে! কাজে কাজেই আমাদের সাহায্য আপনার দরকার হয়ে পড়ল।’

‘রানা, মিথ্যে ভ্যাজর-ভ্যাজর করছ!’ সম্বোধনটা তুমিতে নেমে আসায় মনে মনে খুশি হলো রানা। ক্লিপটনের কঠোর মুখ ঘামে চকচক করছে। ‘তোমাকে আমি নিখোঁজ এক লোককে খুঁজে বের করবার কাজ দিয়েছিলাম, তুমি সে কাজ করেছ-এর মধ্যে কোনও অন্যায় বা ঘোরপ্যাঁচ নেই। লোকটা যদি পরবর্তী সময়ে খুন হয়ে যায়, সে-দায় কিছুতেই আমার ওপর বর্তায় না!’

রানা ভাবছে, এখনও পিস্তল বের করছে না কেন লোকটা! বলল, ‘এই মৃত্যু বণ্টনের কাজটা দেরি করিয়ে দেবে না বলতে চান? যেটুকু সময় পাওয়া যাবে তার মধ্যে যদি আপনার কাকা মারা না যায়, তাকে মারাও তো আপনার জন্যে কঠিন কোনও কাজ নয়। কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা করছেন, যেন আপনার কাকা মারা যায়, কিন্তু আসল কথাটাই তো আপনার জানা নেই-ওই লোকটা রবার্ট স্ট্যানলি ছিল না।’

বজ্রপাতের পরমুহূর্তের স্তব্ধতা। আত্মা চমকে গেছে অ্যাডাম ক্লিপটনের।

‘তোমার এই গাঁজাখুরি গপ্পো শোনার ধৈর্য আর আমার নেই, রানা। আমাকে বাড়িতে ফিরিয়ে…’

‘প্লেন ক্র্যাশেই মারা গিয়েছিল আসলে রবার্ট স্ট্যানলি।’ কয়েক সেকেণ্ড চুপ করে থাকল রানা। ‘ফিলিপ শেফার্সও ছিল একই প্লেনে-বেঁচে যাওয়াদের একজন। স্ট্যানলি মনে করে আপনি এই ফিলিপ শেফার্সকে খুন করেছেন, ক্লিপটন। দুর্ঘটনায় একটুও জখম হয়নি শেফার্স, বরং ঝাঁকি খেয়ে বুদ্ধি খুলে গিয়েছিল ওর। ইনশিওরেন্সের মোটা টাকার জন্যে মাথায় খেলে গিয়েছিল পরিচয় বদলের আইডিয়াটা। স্ট্যানলির জ্বলন্ত মৃতদেহের পাশে পড়ে থাকা ওয়ালেটটা কুড়িয়ে নিয়ে নিজের লাইটার ছুঁড়ে দিয়েছিল ওর লাশের গায়ে। স্ট্যানলি হিসেবে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার একঘণ্টার মধ্যে ফোন পেয়ে ওর স্ত্রী রিটা শেফার্স এসে ওকে নিয়ে যায়। ফিলিপ শেফার্সের মতলবটা বোঝা কঠিন কিছু নয়: ইনশিওরেন্সের টাকা ছাড়াও ওর বউ ট্রান্স-আটলাণ্টিক এয়ারলাইন্স থেকে বড় অঙ্কের ক্ষতিপূরণ তুলবে, তারপর দুজন মিলে দেশান্তরি হবে। আগুনে পুড়ে ভস্ম হয়ে যাওয়ায় কোন্‌টা কার লাশ চেনার কোনও উপায় ছিল না। সেই অনিশ্চয়তার সুযোগ নিয়েই…’

‘এটা তোমার আরেক ধাপ্পাবাজি!’ বলে উঠল ক্লিপটন। ওর চোখ দুটোকে নীল মার্বেলের মত লাগছে এখন দেখতে। সাপের মত ঠাণ্ডা দৃষ্টি সে-চোখে।

‘আপনার ওই তিরিশ হাজার ডলারের লোভ যে ফিলিপকে বেশ কিছুটা দুলিয়েছে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। স্ট্যানলির ওয়ালেটে আপনার চিঠি পেয়ে ওই টাকার ব্যাপারে জেনেছিল সে। কিন্তু সামনে আসতে ভয় পেয়েছে বেচারা, ভেবেছে, হয়তো আপনার বা স্ট্যানলির পরিবারের কারও কাছে ধরা পড়ে যাবে যে ও আসল লোক নয়। ও তো জানত না, আপনি বা স্ট্যানলির ভাগীদারদের কারও জানা নেই ও দেখতে কেমন। ডিয়ার অ্যাডাম ক্লিপটন, আর সব অ্যামেচারদের মতই নিরেট গাধামি করেছেন আপনি। মিসেস শেফার্স ছাড়া একমাত্র আপনিই জানতেন কোথায় লুকিয়ে আছে স্ট্যানলি, ওরফে ফিলিপ শেফার্স। গতকাল দুপুরে আপনাকে যখন আমি টেলিফোনে জানালাম, পোর্টল্যাণ্ড হোটেলের ২৩২ নম্বর কামরায় পল ব্রেনান নাম নিয়ে আছে রবার্ট স্ট্যানলি, ছুটলেন আপনি সেখানে। কিন্তু পৌঁছেই জানতে পারলেন, হোটেল ছেড়ে চলে যাচ্ছে স্ট্যানলি। ওর পিছু নিয়ে আপনিও চলে গেলেন ম্যানহাটনের মারলিন হোটেলে। তারপর আড়াল থেকে যখন শুনলেন রিটা শেফার্স নামে একটা মেয়েকে ডাকছে স্ট্যানলি ওই হোটেলে, তখনই মাথায় ঝিলিক দিল শয়তানি বুদ্ধি। ওর পিঠে পিস্তল ঠেকিয়ে গুলি করলেন আপনি, তারপর ঘাপটি মেরে অপেক্ষা করলেন রিটার জন্যে।’

দরদর করে ঘামছে এখন অ্যাডাম ক্লিপটন। মাথা থেকে টুপিটা সরাল। বোঝা গেল, ওখানেই ছিল ওর দুই শটের ডেরিঞ্জার পিস্তলটা। রানার বুক বরাবর তাক করে ধরল সে ওটা। ‘তোমার এই বেপরোয়া দুঃসাহসের প্রশংসা করতে পারছি না, মাসুদ রানা। গাধামি আমি নই, তুমিই করেছ এই নির্জন জায়গায় আমাকে নিয়ে এসে। কষ্ট করে সত্যটা আবিষ্কার করেছ বটে, কিন্তু তাতে লাভ হলো না কিছুই। বুঝতেই পারছ, এত কথা বলে নিজের মৃত্যু নিজেই ডেকে এনেছ তুমি। বাধ্য হয়েই তোমাকে এখন খুন করতে হচ্ছে আমার!’

‘আরে, করেন কী, করেন কী!’ আর্তনাদ করে উঠল রানা। ‘দেখুন, স্টিয়ারিং ধরে আছি আমি দুই হাতে। ভয় পেয়ে তাড়াহুড়োয় কিছু না করে আমার কথাটা শেষ করতে দিন। তার আগে গ্লাভ কম্পার্টমেণ্টটা খুলে ট্র্যান্সমিটারটা একনজর দেখে নিন। এতক্ষণ আমাদের যা কথা হয়েছে সব শুনেছেন ক্যাপটেন জোসেফ ক্রাউলি, সেইসাথে সবকিছু রেকর্ডও হয়ে গেছে পুলিশের টেপ রেকর্ডারে। আমাদের সব কথা ব্রডকাস্ট করেছি আমি, ক্লিপটন! খুলেই দেখুন সামনের গ্লাভ কম্পার্টমেণ্টটা।’

ঠাণ্ডা, নীল দৃষ্টি রানার চোখের উপর স্থির রেখে কম্পার্টমেণ্টটা খুলল ক্লিপটন, দস্তানা পরা বামহাত বাড়িয়ে বের করে আনল ট্র্যান্সমিটারটা। ধারা বিবরণীর মত বলে চলেছে রানা, ‘খুবই শক্তিশালী জিনিস, রেঞ্জ দু’হাজার গজেরও বেশি, পুলিশের…’

‘এসব চালবাজি তোমাকে রক্ষা করতে পারবে না, রানা। এটা ট্র্যান্সমিটার না কচু! ট্র্যান্সমিটার আমি চিনি না মনে করেছ? এর অ্যাণ্টেনা কোথায়? টিউব কোথায়? মাইক্রোফোন কোথায়? ধোঁকা দেয়ার…’

‘নতুন প্রযুক্তি সম্পর্কে আপনার…’

দপ্‌ করে চারপাশ থেকে একই সঙ্গে জ্বলে উঠল অনেকগুলো ফ্ল্যাশলাইট। বিশালদেহী ক্যাপটেনের দু’পাশে দাঁড়িয়ে আছে গিলটি মিয়া ও তার স্যাঙাৎ ক্যাভিন হাওয়ার্ড। প্রচণ্ড এক হাঁক ছাড়লেন ক্যাপটেন, ‘ঘিরে ফেলেছি আমরা তোমাকে, ক্লিপটন! ড্রপ দ্য গান!’

চারপাশের ঝোপ-ঝাড় থেকে সাব-মেশিনগান হাতে বেরিয়ে এল আট-দশজন কমব্যাট পুলিশ। আতঙ্কে বিকৃত হয়ে গেছে অ্যাডাম ক্লিপটনের চেহারা। হতচকিত ভাবটা কাটিয়ে উঠে ঠেসে ধরল ডেরিঞ্জারটা রানার পাঁজরে। ‘বেরোও, রানা! বেরোও গাড়ি থেকে! তোমাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করব আমি!’ ক্লিপটনের কব্জি চেপে ধরল রানা। ধস্তাধস্তি চলছে, এমনি সময়ে গিলটি মিয়ার মার্বেল-পিস্তল থেকে ছুটে এল একটা অব্যর্থ গোলা। মার্বেলটা ঠকাস করে ক্লিপটনের টাকে লেগে পিছলে বেরিয়ে গেল জানালা দিয়ে। ব্যথায় চেঁচিয়ে উঠল খুনি লইয়ার। টান দিয়ে দু’পাশের দরজা খুলে ফেলল দু’জন আর্মড পুলিশ।

‘আমি শেষ!’ দাঁতে দাঁত চেপে বলল ক্লিপটন। ‘কিন্তু তোমাকেও ছাড়ছি না, রানা!’ বলেই টিপে দিল সে ট্রিগার। ছোট মরিচের ঝাল বেশি-প্রচণ্ড আওয়াজ হলো গুলির। এটাও রেকর্ড হয়ে গেল টেপ রেকর্ডারে।

এতক্ষণে হাসি ফুটল রানার মুখে। বলল, ‘এবার সত্যিই মরলেন, মিস্টার ক্লিপটন। আপনাকে আর বাঁচাবার সাধ্য নেই কারও।’

গুলির আওয়াজ শুনে ছুটে গাড়ির পাশে চলে এল গিলটি মিয়া। হতচকিত, নিষ্পাপ দৃষ্টি রাখল রানার মুখে, ‘আপ- আপনাকে লেগেচে, সার?’

‘হ্যাঁ, বেশ জোরে ধাক্কা লেগেছে।’

কোটের ল্যাপেল তুলে নীচে পরা বুলেটপ্রুফ ভেস্টটা দেখিয়ে দিল রানা।

আমাদের কাছে গল্প লিখে পাঠাতে এখানে ক্লিক করুন

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

মোট পৃষ্ঠাদর্শন